দেশ-জাতি তথা বিশ্বমানবের মুক্তি ও কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার দ্বীতীয় পর্ব শেষ হয়েছে। রোববার (১১ই  ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১১টায় মোনাজাত শুরু হয়ে তা ১১টা ৪৩ মিনিটে শেষ হয়। ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ পরিচালনায় শেষ হয় এই সম্মিলিত দোয়া।

এর আগে, আজ ইজতেমার শেষ দিনে ফজরের পর থেকে হেদায়েতি তথা দিক নির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়।

ইজতেমার আয়োজকরা জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে হিন্দিতে ধর্মীয় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। বাংলা তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। বয়ান শেষে হেদায়াতি বয়ান তথা দিক নির্দেশনামূলক বয়ান করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ঢাকা, গাজীপুরসহ সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দল বেধে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল ছিল।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে আজ

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১২-১৪ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বিরা। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক দেশের ৩ হাজার ২৬৩ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তারা।

রোববার ফজরের পর বয়ান কর‌বেন ভার‌তের মুফতি মাকসুদ তার বক্তব্য বাংলা তরজমা কর‌বেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। এরপর হেদা‌য়ে‌তি বয়ান। হেদা‌য়ে‌তি বয়া‌নের শে‌ষে হেদায়েতের কথা ও দোয়া। মোনাজাত প‌রিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছে‌লে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। এদিকে ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি চলছে।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকেই মানুষ অংশ নিয়েছেন দ্বিতীয় পর্বের এ ইজতেমায়। তারা জেলাভিত্তিক নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে থেকেও ইজতেমায় অংশ নিতে এসেছেন অনেক অতিথি। সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক, এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপসহ ৫৪টি দেশ থে‌কে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৬ জন বি‌দে‌শি মুস‌ল্লি ইজ‌তেমার ময়দা‌নে এসেছেন।

এদিকে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে দ্বিতীয় পর্বেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করেছে।

বৃহস্পতিবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশে এস্তেকবালি (স্বাগত) বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা শরিফ আহমেদ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ মনসুর। বাদ জোহর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা হারুনুর রশিদ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বাদ আসর বয়ান করেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার। তার বয়ান বঙ্গানুবাদ করেন মাওলানা মুফতি জিয়া বিন কাশেম।

ইজতেমা ময়দানে এবারও আসতে পারেননি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য হাজি মনির হোসেন।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, মাওলানা সা’দ সাহেবের বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আলোচনা হয়েছে। আশানুরূপ কোনো খবর এখোনো পাওয়া যায়নি। তবে ইজতেমায় মাওলানা সা’দের তিন ছেলে এসেছেন। তারা হলেন, মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী, মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী।